ক্লাস নাইনের সেই মেয়েটা
------
-------------------------
রনি তখন নবম শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের সবার চেয়ে বয়সে বড় ছিলো সে।মোটাটামোটি অভিঙ। হিরো মার্কা চেহারা নিয়ে যাকেই প্রেমের প্রস্তাব করবে এক কথায় রাজি হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ছাবিনা ও কার্পণ্য করলোনা। প্রথম যখন রনি ক্লাসে ভর্তি হলো সবাই একরকম অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।এতো সুন্দর একটা ছেলে মানুষ হতে পারে! ক্লাসের আরো মেয়েরা তাকে মনে মনে গেথে ফেলেছে ইতিমধ্যেই ।কিন্তু ছাবিনা ছিলো আত্বমর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে। ওর মনেও রনি স্থান পেয়েছে কিন্তু চেপে রাখলো।
রনি যখন ক্লাসে ঢুকতো তখন ও মায়ার চোখে রনির দুটি চোখের দিকে চেয়ে থাকতো আর ভাবতো তুমিতো আমার মনের রাজা। ভালোবাসি তোমাকে।
রনির বাদরামী আর চাঞ্চল্যতা ছাবিনার এতো ভালো লাগতো যে, ক্লাসের সবার চোখ ফাকি দিয়ে আড়ালে গিয়ে দুচোখ ভরে দেখতো।
একদিন রনমাঠের মাঝখানে খেতে প্রচন্ড আঘাত পেলো।কপাল ফেটে গিয়ে রক্ত বের হলো। ছাবিনা বিদ্যালয়ের পেছনে থেকে শুধু পায়তাড়া করছে আর উকি মেরে দেখছে কি হলো রনির। মেয়েদের বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা। কাছেও যেতে পারছেনা। চোখের পানি কখন যে ওকে ফাকি দিয়ে ঝরতে লাগলো বুঝতে পারলোনা।
সত্যিকারের ভালোবাসা এমনি হয়। প্রিয়জনের কিছু হলে পাগলের মতো হয়ে যায় এটাই স্বাভাবিক।
ঐদিন রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তখন।ছাবিনা ভাবতে লাগলো একটা অচেনা ছেলের কপাল বেয়ে রক্ত পড়লো তাতে আমার এমন হলো কেনো! আমি কেনো ছটফট করলাম? আমার চোখে কেনো পানি আসলো ?
তবে কি আমি ওকে ভালোবাসি?
বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে শুধু রনিকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।
পরদিন রনির বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হলে ছাবিনা একে ওকে জিঙ্গাসা করলো ও কেনো আসেনি? ঐদিন সত্যিই রনি খুবই অস্বুস্থ্য তাই আসতে পারেনি।কিন্তু সে যে এক কিশোরীর মন কিনে নিয়েছে তা সে জানেনা।
কদিন ধরে ছাবিনার বান্ধবী রুবীনা ছাবিনাকে লক্ষ করলো যে, রনির প্রতি ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। রনি হাসলে ও হাসে, রনি দু:খ পেলে ও র মন কালো হয়ে যায়।ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে রুবিনা একটা ফন্দি আটলো। রুবিনা রনিকে ব্যাপারটা জানালো এবং ছাবিনার কাছে একটা ফুল উপহার দিলো।এতে ছাবিনার মনে কতটুকু আঘাত হানে এটাই দেখতে চাইলো।
হিতে বিপরীত হলো।ছাবিনা ঐ মুহূর্তে বাড়িতে চলে গেলো। পছন্দের মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাবে ভেবে বালিশে মুখ লাগিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগল।
রুবিনাতো রীতিমতো অবাক হয়ে গেলো।এখন কিভাবে কি করবে বুঝতে পারলোনা।আজ সাতদিন হলো ছাবিনা বিদ্যালয়ে আসেনা। অবশেষে ছাবিনার বাড়িতে গিয়ে দেখলো ওর শ্বারীরীক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। কিভাবে বুঝিয়ে বলবে যে ওর সাথে মজা করেছিলো সে। যাইহোক, ছাবিনাকে বুঝিয়ে বললো সব ঘটনা।এবার ছাবিনা রুবিনাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলে ফেললো ও রনিকে ছাড়া বাচবেনা।ভালোবাসে রনিকে।যেভাবেই হোক রনিকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
রুবিনা কথা দিলো এটাই হবে।
পরদিন রনিকে সব ঘটনা খুলে বললো।রনি সবকিছু শুনে প্রেমের প্রস্তাবে সম্মতি দিলো। এবার দুজনের মহামিলনের পালা। কোথায় হবে তাদের প্রথম দেখা চিন্তায় পড়ে গেলো রুবিনা।ঠিক হলো ঠাকুরের দিঘিরপাড়ের ওদের।পড়ন্ত বিকেলবেলা হবাই যখন যার যার নিজ কাজে ব্যাস্ত তখন দুটি মানুষের মিলনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে রুবিনা। রনি দিঘিরপাড়ে তালগাছের নিচে দাড়িয়ে আছে কখন মনের মানুষটি তার কাছে আসবে। ওদিকে ছাবিনা প্রিয়তমের জন্য সাজুগুজু করতে ব্যাস্ত। হলুদকোটা শাড়ি পরে কপালে টিকলি ঝুলিয়ে ছাবিনাকে আজ খুবই সুন্দরী দেখাচ্ছে।ছাবিনাও অনেক খুশী মনের রাজার কাছে আসছে। রূবিনা দাড়িয়ে আছে ছাবিনার আসার অপেক্ষায়।
কিছুক্ষণ পর দুর থেকে দেখলো হলুদকোটা শাড়ি পরে আকাশের নিল পরী দিঘীর দিকে আসছে।রনি ও তার আসার অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে আছে কখন আসবে সে।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছাবিনা এসে দাড়ালো রুবিনার সামনে।রনি লজ্জায় ওদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।ছাবিনার বুক ধড়পড় করছে।দুজনে যেনো মহা আনন্দে আছে এই মুহূর্তে।রুবিনা এবার ছাবিনার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো চলো হে রুপবতী রাণী! তোমাকে তোমার ভালোবাসার কাছে নিয়ে যাই।এই বলে রনির কাছে গিয়ে দাড়ালো। দুজনকে এক করে দিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করলো রুবিনা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন