মলমূত্র খেয়ে পনেরো দিন পরে মৃত্যু-বাথরুমে বন্দি এক ছোট ছেলের মৃত্যুর আগে রক্ত দিয়ে দেয়ালে লিখে যাওয়া করুণ কাহিনী-তানভীর ডট'কম
মলমূত্র খেয়ে পনেরো দিন পরে মৃত্যু-বাথরুমে বন্দি এক ছোট ছেলের মৃত্যুর আগে রক্ত দিয়ে দেয়ালে লিখে যাওয়া করুণ কাহিনী
*কাহিনীটি আমার মায়ের মুখ থেকে শোনা।মাঝেমাঝে মা এই ঘটনাটা বলতো আমাদের সচেতন হওয়ার জন্য।
রাজা ছিলো ছেলেটির নাম। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো। বা - মায়ের একমাএ সন্তান ছিলো রাজা। প্রতিদিন প্রায় সাত ক্রোশ পায়ে হেটে স্কুলে যেতো। সে। সরকারি স্কুলে আজ আম কাঠালের বন্ধ দিবে।প্রতিদিনের মতো আজ ও রাজা স্কুলে এসেছে। আনন্দে আত্বহারা হয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে সহপাঠীদের সাথে খেলছে আর ছড়া পাঠ করছে, তাই তাই তা,
মামা বাড়ি যা।
রাজার খুবই খুশি লাগছে যে সে কাল মামার বাড়িতে যাবে।মামার বাড়িতে গিয়ে আম -কাঠাল খাবে।নানীর হাতের পিঠা খাবে।
কল্পনা করতে করতে কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে রাজা।
বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হলো যথারীতি ভাবে এক মাস। সবাই ছুটি পেয়ে বইখাতা গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো। রাজাও সবার মতো বইখাতা গুছিয়ে যাবে এমন সময় তার বাথরুমে বেগ দিলো।বিদ্যালয়ের বাথরুম এখনো তালা মারে নাই দেখে রাজা তার জরুরত সারতে গেলো।কিন্তু ভাগ্য তাকে আর বাথরুম থেকে জ্যান্ত ফিরিয়ে দেবেনা সে বুঝতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক একজন ছাত্রকে বিদ্যালয়ের বাথরুম তালা মারতে বললেন। রাজা বাথরুমের ভতরে আছে বা কেউ ভিতরে আছে কিনা দেখতে বললেন স্যার। কিন্তু তালা মারার সময় ছেলেটির কিছুই মনে নেই। ভিতরে রাজাকে রেখে তালা মেরে দিলো ছেলেটি।রাজা তার জরুরত শেষে যখন দরজা খুলতে গেলো দরজা খুললো না।
বারবার দরজা ধাক্কাতে লাগলো।কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিলোনা। রাজা চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো "আমাকে কেউ বাচাও!" আমি বাথরুমের ভেতরে আছি "।কেউ রাজাকে বাচাতে আসলোনা।সন্ধ্যা হয়ে গেছে,খুব ই খিধে পেয়েছে তার।কাদতে কাদতে সে মাকে ডাকতে লাগলো " মা.....মা....ওমা!..... আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে...মা।ভাত খাবো মা! কষ্টের কথা হলো ওখানে কেউ হাটাচলাও করেনা।কে তার ডাকে সাড়া দিবে,তাকে বাচাতে আসবে?
এদিকে রাজার মা বাবা খুজে বেড়াচ্ছে সব জায়গাতে।বনে-জঙ্গলে কোথাও বাদ দেয়নি তারা।রাতে দুচোখের পাতা এক করেনি তারা। রাজা রাতভর ক্ষুধার জ্বালায় কি করবে বুঝতে পারছিলনা।কি করবে বাথরুমের ট্যাংকির পানি খাবে না কি না খেয়ে থাকবে বুঝতে পারেনা।সকাল হয়ে গেলো বুঝতে পারলো।ভাবলো আজ মনে হয় ওকে কেউ খুজে পাবে আর এই মৃত্যুপুর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।কিন্তু আজ ও কেউ ওকে খুজে পেলনা।ওর সব আত্বীয়স্বজনদের বাড়িতে জানানো হলো।কিন্তু কারো বাড়িতে রাজাকে খুজে পাওয়া গেলনা।সবাই কোনো পথ খুজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে গেলো।একপর্যায়ে মেনেই নিলো রাজা আর কোথাও নেই।ওকে হয় তো কেউ মেরে ফেলেছে। কেউ পানিতে খোজে আবার কেউ বনে জঙ্গলে ওর লাশটা খোজে।কিন্তু খুজে পায়নি কেউ। আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো রাজা বাথরুমের পরিত্যাক্ত পানি খেয়ে কোনো মতে আধমরা হয়ে বেচে আছে।একদিন এক বৃদ্ধ মহিলা স্কুলের বাথরুমের কাছে এসেছিলো কি কারনে জানেনা রাজা।বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করছিলো সে।কিন্তু একটা ডাক ওই বৃদ্ধার কানে পৌছালোনা।
আজ বারোদিন হয়ে গেলো রাজা বাথরুমের ভেতরে বন্দি অবস্থায় আছে ক্ষুধা পেটে নিয়ে বন্দি জীবন কাটছে তার।চিৎকার করার বিন্দুমাত্র গলায় জোর নেই।স্কুলের ট্যাংকে পানিও নেই যে পানি খেয়ে জীবন বাচাবে।পানির তৃষ্ণায় খা খা করছে ওর গলা। মনে হয় এক সাগর পানি এনে দিলে এক চুমুকেই শেষ করে ফেলবে ও। আজরাইল যখন সামনে আসার উপক্রম,তখন ক্ষুধা নিবারন করতে বাথরুমের মলমূত্র হাত দিয়ে উঠিয়ে খেতে লাগলো। কতটুকু অসহায় হলে মানুষ পায়খানা খেয়ে পেঠের জ্বালা মেটায়? এরপরও চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে আমাকে কেউ বাচাবে। যখন বাথরুমের মলমূত্র ও শেষ হয়ে গেলো তখন রাজার আর সময় নেই সে বুঝতে পারলো।
মৃত্যুর আগে ও বাথরুমের দেয়ালে গায়ের রক্ত দিয়ে লিখে গিয়েছিলো ওর প্রতিটা দিনের কাহিনি।
ওর শেষ বাক্য ছিলো " সবাই মামা বাড়িতে গিয়ে আম কাঠাল খাচ্ছো।আমার কপালে একমুঠো ভাত ও জোটে নাই এই কদিন।মৃত্যুর আগে বাথরুমের বিষ্ঠাও আমার রুজি থেকে খোদা উঠিয়ে নিলো। আজ পনেরো দিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছি আমি। কেউ আমাকে বাচাতে আসলেনা। মৃত্যুর পরে খোদার কাছে আমি শুধু পানি আর ভাত চাইবো। "
এক মাস পরে যখন বিদ্যালয় খুললো তখন বাথরুমের ভেতরে রাজার কঙ্কাল খুজে পেলো সবাই।দেয়ালের লেখা দেখে সবাই চিনতে পারলো রাজাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন